ছার, কেলাসে যাইবেন না? টাইম তো হইয়া গেসে?’
পিয়নের ডাক শুনে মিছির আলী বাস্তবে ফিরে আসেন। হাতের সাইকোলজি টুডেটা থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলেন এরই মধ্যে ডিপার্টমেন্ট ফাকা হয়ে গিয়েছে। ফ্যামিলি ইনচেষ্ট প্রবনতার মানসিক কারন বিষয়ে একটা আর্টিকেলে ডুবে গিয়ে তিনি সময়ের হিসেবই হারিয়ে ফেলেছিলেন। পাশের পার্টিশনে থেকে শুধু চেয়ারম্যান সাহেবের কম্পিউটার থেকে মৃদু হিন্দি গানের সুর ভেসে আসছে। চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে তিনি পিয়নের দিকে তাকালেন।
‘এই তোকে না বলেছি শুদ্ধ করে কথা বলতে?’
‘আআআমি কি কই ছার, আপনেও তো…’ পিয়ন আমতা আমতা করে।
‘চোপ!’ মিছির আলীর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। উনি টেবিল থেকে কয়েকটা লেকচার শিট নিয়ে ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে এলেন। সরু করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে ওনার মন বিরক্তিতে ভরে গেল। কদিন হলো উনি থার্ডক্লাস ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টে সরাসরি অ্যাসিন্টেনন্ট প্রফেসর হিসেবে জয়েন করেছেন। এই বিল্ডিং দেখে প্রথমে উনি ভেবেছিলেন এটা বুঝি অফিস। পরে জেনেছেন এটাই মূল ভবন। ক্লাসের কাছাকাছি যেতেই হঠাৎ কোত্থেকে যেন দুটো মেয়ে উদয় হয়ে একেবারে ওনার গায়ে ধাক্কা লাগিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। থেমে গিয়ে চরম বিরক্তিতে মিছির আলী পিছনে তাকিয়ে তাদের হাসির আওয়াজ মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে রইলেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ক্লাসের দিকে রওনা দিলেন তিনি। জয়েন করার দিন থেকেই চলছে এসব। ভার্সিটির সব মেয়েই যেন তার সাথে ধাক্কা লাগাতে উন্মুখ। অথচ মেয়েদের থেকে সবসময় একশ হাত দূরে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। ভার্সিটিতে পড়ানোর পাশাপাশি তিনি শখের বশে বিভিন্ন এবনরমাল রহস্যের মীমাংসাও করে থাকেন। তবে মেয়েদের মনের রহস্যটার আজ পর্যন্ত কোন কিনারা করতে পারেননি বলেই চল্লিশোর্ধ মিছির আলী আজও অবিবাহিত। কলেজে পড়ার সময় একবার উনি বন্ধুদের সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্দানে ফুটবল খেলছিলেন। তাদের খেলার স্থান থেকে একটু দুরেই দুই কপোত-কপোতী ভালোবাসায় ব্যুদ হয়ে ঢলাঢলি করছিল। খেলার মাঝে হঠাৎ বল গড়িয়ে তাদের পিছনে একটা ঝোপে চলে গিয়েছিল। অতগ্য মিছির আলীকে যেতে হলো বল আনতে। এই প্রেমিক যুগলকে ডিঙ্গিয়ে বল আনা সম্ভব ছিল না; তাই উনি মেয়েটাকে শুধু বলেছিলেন, ‘আপা ফুটবলটা দেন, খেলবো’ প্রেমের নেশায় মত্ত মেয়েটা এতে কি বুঝেছিল কে জানে। এরপর তার প্রেমিকের রামধোলাইয়ে তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারেননি মিছির আলী। এই ঘটনার পর থেকে আজও মেয়েদের সামনে সহজভাবে কিছু বলতে পারেন না মিছির আলী। কিন্ত এখানে এসে তার মনে হচ্ছে বাংলাদেশে বুঝি ছেলের আকাল পড়েছে। উনি ক্লাসে ঢুকতেই সব মেয়ের নজর ঘুরে গেল তার দিকে। কয়েকটা মেয়ে একযোগে শিস দিয়ে উঠল। মেয়েরাও যে শিস দেয় এটা মিছির আলী আগে জানতেন না; তাও আবার তার দিকে তাকিয়ে! মেয়েগুলো কি আসলে তার নিয়মিত ব্যায়াম করে এখনো রক্ষা করা সুস্বাস্থ্যের প্রতি আকৃষ্ট না তাকে জ্বালাতনের জন্য এসব করে এটা তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। মিছির আলী মুখ নামিয়ে ক্লাসে ঢুকে লেকচার স্টেজে উঠলেন; ধমক দেবেন কি মেয়েগুলো কোন প্রশ্ন করলেও উনি আমতা আমতা করতে থাকেন। ওরা শিস বাজিয়েই যাচ্ছে। মিসির আলী শিটগুলো বের করে কোন মতে তাদের দিকে তাকাতে শিস একটু কমে এল। ছেলেগুলো সব নিরব হাসিতে ফেটে পড়ছে। একটা গলা খাকারী দিয়ে উনি শুরু করলেন।